জার্মানিতে স্থায়ী বাসিন্দা বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা PR পাবার চিন্তা কম-বেশি অনেকেরই থাকে। আমাদের বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের মানুষের অনেকের মধ্যে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ইকোনমি জার্মানির পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হবার বেপারে অনেক আগ্রহ বা স্বপ্ন থাকে। আসলে জার্মানিতে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট একবার হয়ে গেলে মনের মধ্যে একটা শক্তি কাজ করে এই জন্যে যে, যদি আপনি কোনো দিন জব হারান, তা হলেও আপনাকে জার্মানি ছেড়ে চলে যেতে হবে না। আপনি এখানকার রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার মধ্যেই থাকবেন।
PR পাবার উপায়:
ইমিগ্রেশন ল এর ধারা § 18c অনুযায়ী একজন প্রফেশনাল (যেমন ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার পেশাজীবী, বিজনেস পেশাজীবী বা অন্যান্য পেশাজীবী) এমপ্লয়মেন্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই PR পাবে যদি:
অপশন ১: ইমিগ্রেশন ল § 18c (1):
১. একজন পেশাজীবী Ausbildung অথবা শিক্ষা অথবা গবেষণার জন্যে ইতিমধ্যে জার্মানিতে থাকেন।
২. চার বছর জার্মানিতে আছেন । এই চার বছর সময়কে দুই বছরে সংক্ষিপ্ত করা হবে যদি কেউ জার্মানি থেকে ডিগ্রী বা Ausbilung সার্টিফিকেট করে থাকে।
৩. পড়াশুনা সম্পর্কিত চাকুরীতে নিযুক্ত আছেন।
৪. ৪ বছর যাবৎ পেনশন জমা দিয়েছেন। এই চার বছর সময়কে দুই বছরে সংক্ষিপ্ত করা হবে যদি কেউ জার্মানি থেকে ডিগ্রী বা Ausbilung সার্টিফিকেট করে থাকে।
৫. যথেষ্ট পরিমান জার্মান পারেন।
৬. আরো কিছু শর্ত পূরণ করে থাকেন। এই শর্তগুলি আমি পরে বিস্তারিত লিখছি।
অপসন ২: ইমিগ্রেশন ল § 18c (২):
১. যদি কেউ EU Blue কার্ড নিয়ে জব করেন, তাহলে তার লাগবে ৩৩ মাস এবং এই সময়টাতে পেনশন পরিশোধ করতে হবে এবং সাধারণ জার্মান ভাষায় সাধারণ কথা বলতে পারবেন (যেমন A1 অথবা সোজা জার্মান বলতে পারেন)।
তবে কেউ যদি যথেষ্ট জার্মান (B1) জানেন, তা হলে তার লাগবে ২১ মাস।
২. আরো কিছু শর্ত পূরণ করে থাকেন। এই শর্তগুলি আমি পরে বিস্তারিত লিখছি।
অপসন ৩:
ইমিগ্রেশন ল এর ধারা § ৯ অনুযায়ী আপনি PR পেতে পারেন নিন্মোক্ত শর্ত পূরণ করলে:
১. জার্মানি তে পাঁচ বছর বসবাস করেছেন এবং ৬০ মাস পেনশন পে করেছেন।
২. আপনি জার্মান সাফিসিয়েন্ট (Ausreichend বা B১) জানেন বা আপনি ইন্টিগ্রেশন কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
৩. জার্মানি তে স্টাডি বা Ausbildung সময় থেকে অর্ধেক কাউন্ট হবে। জব এর টাইম ফুল কাউন্ট হবে।
অসুস্থতা সম্পন্ন মানুষের জন্যে PR এর শর্ত:
কারো যদি মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্য এতো খারাপ হয় যে, সে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে খেতে পারবে না, তা হলে সে PR এর জন্যে বিবেচিত হবে। এই ক্ষেত্রে তার চাকুরী বা কাজ থাকা, পেনশন পে করার নিয়ম এবং জার্মান ভাষা জানার বাধ্যবাধকতার শর্তগুলি প্রযোজ্য হবে না। এই রকম ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় ওই ব্যক্তি PR পেতে পারে।
আরো কি কি শর্ত:
১. আপনি অতীতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইন ভঙ্গ করেননি। আপনি জনগণের জন্যে হুমকি না।
২. আপনি জার্মানির সাধারণ আইন-কানুনগুলি জানেন।
৩. আপনার থাকার জন্যে একটা বাসা আছে। এই বাসাটি অত বড় হবে যাতে ৬ বছরের উপরের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্যে ১২ বর্গ মিটার জায়গা ঘরে থাকে। আর ছেলেমেয়ের বয়েস ৬ থেকে ২ এর মধ্যে হলে, এটা তাদের জন্যে ১০ বর্গ মিটার। দুই বছরের বাচাদের জন্যে কোনো স্পেস রাখা দরকার নেই। তবে এই ক্ষেত্রে ১০% জায়গা কম থাকলেও সমস্যা নেই।
কি কি ডকুমেন্ট সাধারণত লাগে এপলাই করার জন্যে:
১. পাসপোর্ট ২. বায়োমেট্রিক ছবি ৩. জার্মানি তে থাকার প্রমান, যেমন প্রথম বাসার রেজিস্ট্রেশন (Anmeldung). ৪. বেতনের স্লিপ ৫. কাজের পারমিশন এর প্রমান ৬. হেলথইন্সুরেন্স কনফার্মেশন পত্র ৭. বাসার কন্ট্রাক্ট ৮. ভাষার প্রমান ৯. পেনশন দেবার প্রমান ১০. অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের পুলিশ ভেরিফিকেশন এর প্রমান ১১. জব কন্ট্রাক্ট বা অন্যান্য প্রমান ।
আরো কিছু লাগলে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আপনাকে জানাবে।
উপসংহার:
উপরুক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে একটা ছোট্ট সামারি আমরা করতে পারি।
i. কেউ জার্মানি তে পড়াশুনা করলে বা EU Blue কার্ড থাকলে, তার PR পেতে ২১ (জার্মান B1 ) থেকে ৩৩ মাস (সহজ জার্মান এ কথা বলতে পারা) লাগবে।
ii. অন্যান্য সব ক্ষেত্রে ৫ বছর লাগবে।
iii. অসুস্থ হলে বিনা চাকুরীতে ও PR পেতে পারবে।
মনে রাখবেন, আপনি PR পাবার জন্যে কোনো Lawyer এর কাছে যাবার দরকার নেই। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া আপনি Lawyer নিলে বরং আপনার প্রসেস আরো দেরি হতে পারে।
এখন আপনি ঠিক করুন কোন ক্যাটাগরিতে আপনি ভবিষ্যতে PR এর জন্যে এপলাই করবেন। কোন ক্যাটাগরিতে এপলাই করলে আপনি দ্রুত PR পাবেন এটা আগে থেকে ভেবে রাখুন।